“আমার কেরিয়ারটা বরবাদ করেছে”:প্রাক্তন BCCI প্রেসিডেন্টকে টার্গেট করে বি’স্ফোরক আম্বাতি রাইডু!

সাম্প্রতিক সময়ে ভারতীয় দল নির্বাচন নিয়ে যে সব বিতর্ক দেখা দিয়েছে, সব থেকে বেশি চর্চা হয়েছে ২০১৯ বিশ্বকাপের স্কোয়াড থেকে আম্বাতি রায়াড়ুর বাদ পড়া নিয়ে। সেই সময় তো বটেই, পরবর্তি সময়ে বহু বিশেষজ্ঞই স্পষ্ট মন্তব্য করেছেন যে, রায়াড়ুকে বিশ্বকাপের স্কোয়াড থেকে বাদ দেওয়া ছিল সব থেকে ভুল সিদ্ধান্ত। এমনকি টিম ইন্ডিয়ার প্রাক্তন হেড কোচের মতামত ছিল তাই।এবছর চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হয়ে রায়াড়ু তাঁর ক্রিকেট কেরিয়ারে দাঁড়ি টানার পরে সেই বিতর্কিত প্রসঙ্গ ফের সামনে চলে আসে। এবার রায়াড়ু নিজে মুখ খুললেন বিশ্বকাপের দল থেকে বাদ পড়া নিয়ে।

আসলে ২০১৯ বিশ্বকাপে ভারতীয় স্কোয়াডে এমন একজনকে দরকার ছিল, যিনি চার নম্বরে ব্যাট করতে নেমে দলকে নির্ভরতা দিতে পারবেন। এক্ষেত্রে রায়াড়ুই ছিলেন সেই মুহূর্তে সেরা বিকল্প। কেননা ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট যতজনকে যাচাই করে ব্য়াটিং অর্ডারের চার নম্বরে, রায়াড়ুই তাঁদের মধ্যে সেরা ছিলেন। তবে সকলকে অবাক করে জাতীয় নির্বাচকরা আম্বাতিকে বাদ দিয়ে বিজয় শঙ্করকে দলে নেন। তৎকালীন নির্বাচক প্রধান এমএসকে প্রসাদ বিজয় শঙ্করকে থ্রি ডায়মেনশন বা থ্রিডি ক্রিকেটার আখ্যা দেন।বিশ্বকাপের দল থেকে বাদ পড়ার পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরিয়ে নির্বাচকদের সিদ্ধান্তকে কটাক্ষ করেন আম্বাতি। তিনি টুইট করেন এই বলে যে, বিশ্বকাপ দেখার জন্য একসেট থ্রিডি চশমা অর্ডার দিয়েছেন।

```

এতদিন পরে বিতর্তিক সেই প্রসঙ্গ নিয়ে টিভি নাইন তেলেগু-তে খোলামেলা মন্তব্য করেন আম্বাতি। তিনি স্পষ্ট জানান যে, বিজয় শঙ্করকে নিয়ে তাঁর সমস্যা ছিল না। তাঁর আক্রমণ কোনওভাবেই তামিলনাড়ুর অল-রাউন্ডারকে উদ্দেশ্য করে ছিল না। বরং তাঁর সমস্যা ছিল মূলত অন্য কিছু ব্যক্তিদের সঙ্গে। সরাসরি নাম না করেও রায়াড়ু জানান, সারা কেরিয়াকে তাঁকে লড়তে হয়েছে হায়দরাবাদের ক্রিকেট কর্তা শিবলাল যাদব ও অন্ধ্রর প্রাক্তন অধিনায়ক এসএসকে প্রসাদের মতো ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে।রায়াড়ু বলেন, ‘কোনও একজন ব্যক্তি দল নির্বাচন করেন না। তাঁর ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ থাকলেও দল নির্বাচনে অংশ নেন আরও অনেকে এবং নির্বাচনের পিছনে আরও অনেক বিষয় কাজ করে। কেননা টিম ম্যানেজমেন্টে অনেক লোক থাকেন। একজন হায়দরাবাদী লোকও ছিলেন, তরুণ বয়স থেকেই যাঁর সঙ্গে আমার সমস্যা ছিল। তাঁর কিছু বিষয় আমার পছন্দ ছিল না এবং আমার কিছু বিষয় তাঁর পছন্দ ছিল না। এমন কিছু মানুষের সঙ্গে সারা কেরিয়ারে আমাকে লড়াই চালাতে হয়েছে।’

আম্বাতি ২০০৪ সালে হায়দরাবাদের হয়ে খেলার সময় শিবলাল যাদব ছিলেন হায়দরাবাদ ক্রিকেট সংস্থার সচিব। তাঁর ভাই রাজেশ যাদব ছিলেন হায়দরাবাদের কোচ। শিবলালের সঙ্গে সমস্যার জেরেই পরের বছর অন্ধ্রপ্রদেশের হয়ে খেলার সিদ্ধান্ত নেন রায়াড়ু। রায়াড়ু আরও বলেন, ‘২০০৫ সালে আমি অন্ধ্রর হয়ে খেলতে যাই। হায়দরাবাদ সেক্রেটারির সঙ্গে সেই সময় অনেক সমস্যা ছিল। ওঁর ভাই কোচ ছিলেন এবং ছেলে ক্যাপ্টেন। সেই সময় হায়দরাবাদ ক্রিকেটে সবকিছু মোটেও ঠিকঠাক ছিল না। আমি যখন অন্ধ্রর হয়ে খেলতে নামি সেখানে ক্যাপ্টেন ছিলেন এমএসকে প্রসাদ। ওঁর জন্যই আমি অন্ধ্র ক্রিকেট দলে কোনও সমস্যার মুখে পড়িনি। তবে দল পরিচালনা নিয়ে ওঁর কিছু ভাবনা-চিন্তা আমার পছন্দ হয় নি। তাই আমি পুনরায় হায়দরাবাদে ফিরে আসি।’বিশ্বকাপের দল থেকে বাদ পড়া প্রসঙ্গে আম্বাতি বলেন, ‘সেদিন আমি আইপিএল দলের সঙ্গে বিমানে ছিলাম। ইঙ্গিত ছিলই যে, আমাকে হয়ত দলে নাও নেওয়া হতে পারে। তবে ছবিটা স্পষ্ট ছিল না। বিমান থেকে নেমে ফোন অন করার পরেই একাধিক মেসেজ আসতে থাকে এবং জানতে পারি যে, আমাকে দলে নেওয়া হয়নি, স্ট্যান্ড-বাই রাখা হয়েছে। অত্যন্ত হতাশ হয়েছিলাম, কেননা আমি দেশের হয়ে খেলতে চেয়েছিলাম, বিশেষ করে বিশ্বকাপের মতো টুর্নামেন্টে।’

```

আম্বাতি সঙ্গে যোগ করেন, ‘দেখুন, যদি ওঁরা আমাকে বাদ দিয়ে রাহানের মতো সিনিয়র কাউকে নিতেন, তাহলে কিছু মনে হতো না। সবাই চায় ভারত বিশ্বকাপ জিতুক, তা সে ওঁরা যে কারণেই আমাকে বাদ দিক না কেন। কারণটা শুধু ওঁরাই জানেন। তবে আমার বদলে যাঁকে দলে নেওয়া হয়েছে, সে যদি দলের কাজেই না লাগে, তাহলে রাগ হওয়া স্বাভাবিক। বিজয় শঙ্করকে নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে কোনও সমস্যা ছিল না। ওর কী দোষ? ও শুধু নিজের ক্রিকেট খেলেছে। তবে আমাকে বাদ দেওয়ার পিছনে চিন্তাভাবনা দেখে মনে হয়েছিল ওঁরা বিশ্বকাপের দল গড়ছে নাকি সাধারণ লিগ ম্যাচের!’শেষে রায়াড়ু বলেন, ‘সবাই ভেবেছিল বিজয় শঙ্করকে টার্গেট করেছি, মোটেও তা নয়। তেমন কোনও উদ্দেশ্যই আমার ছিল না। আসলে যদি আপনি সিদ্ধান্ত নেন আমার বদলে অন্য কাউকে নেওয়া হবে, তবে একই রকম ক্রিকেটারকে নেওয়া উচিত। ৪ নম্বরে ব্যাট করার জন্য এমন একজন ক্রিকেটারকে কীভাবে দলে নিতে পারেন, যে কিনা ৬-৭ নম্বরে ব্যাট করে? তার আগে আমি নিউজিল্যান্ডে খেলেছি, চার নম্বরে ব্যাট করার জন্য ভালোভাবে তৈরি হয়েছি। তার পরেও কেন বাদ দেওয়া হয়, সেটা শুধু ওই লোকগুলোই বলতে পারবেন।’